শীতকাল যেন অতিথি পাখির মেজবানিতে ভরপুর, রাণীশংকৈলের প্রাচীন দীঘি রামরায়

নাজমুল হোসেন,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ

দেশের উত্তরে হিমালয়ের কোলঘেঁষা সীমান্তবর্তী ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈলে অবস্থিত

দিঘিটি  বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অতিথি পাখির কলোরোলে এখন মুখরিত। দুর থেকে দেখলে দিঘির মধ্যে ভাগে পরিস্কার পানিতে কচুরিপানার স্তুপের মতো দেখতে মনে হলেও। আসলে কাছাকাছি থেকে খেয়াল করে দেখলে মনে হবে শতশত অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে এক অন্যরকম মনমুগ্ধকর একটি দৃশ্য যা দেখেই একটা অন্য রকম প্রসান্তি লাগে মনের মধ্যে।  এরই মধ্যে প্রতিদিন ছুটে আসছে দুর দূরান্ত থেকে আরো নতুন নতুন অতিথি পাখির দল। আর এ পাখির কিচিরমিচির শব্দ ও দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো দেখলেই যেন এখন কার মানুষ বলে দিতে পারে শীত পুরোপুরি ভাবেই এ জেলায় চলে এসেছে।

কিছু দিন থেকে ভোরে এবং বেলা পশ্চিমে হেলে পড়লেই গায়ে এখন মোটা কাপড় পরিধান করে এ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে বাড়ি থেকে বের হতে হয়।।

 এদিকে অঞ্চলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পার হলেই সন্ধ্যা থেকেই ঘন কুয়াশায় এ জেলার পথ ঘাট, নদ নদী ও গ্রাম শহর জুড়ে এখন পুরোদমে শীতের আমেজ বিরাজমান ।

এরই মধ্যে দূরের অচেনা কোন দেশ থেকে অতিথি পাখিরা রাণীশংকৈল উপজেলার অন্যতম প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রামরায় দিঘিটি কে তাদের মেজবানি অভয়ারণ্য হিসেবে খুজে নিয়েছে । অবশ্য প্রতিবছর এসময় ছুঁটে আসে খাবারের সন্ধানে এসব অতিথি পাখি৷

দিঘিটি দর্শনীয় হওয়ায় অতিথি পাখি দেখতে দর্শনার্থীদের ভীর প্রতিনিয়ত

লেগেই থাকে । পুরো দিঘির জলাশয় সেজেছে নতুন সাজে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অতিথি পাখি ও জলাশয়ের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর করে দর্শনার্থীদের।  প্রতিবছর শীত এলেই এসব পাখি এখানে এসে প্রকৃতিকে সাজায় বাহারী নতুন নতুন রুপে।

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে রামরায় দিঘি জুুড়ে। তবে আশপাশের কয়েক জেলার মানুষ অবসর সময় পেলেই পরিবার নিয়ে ছুটে আসে এসব পাখি প্রেমি ও সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ গুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত পর্যটন কেন্দ্র’র পাখিগুলোকে দেখার জন্য। পুকুরের কেয়ার টেকার জানায়,পুকুরের পানিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে ভেসে বেড়ায় অতিথি পাখির দল।কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই আবার তারা নিজেদের খাদ্যোর জন্য ছুটে যায় বিভিন্ন এলাকায় আবার সকাল হলেই ছটে আসে রামরায় দীঘির জলে।

ভালোবাসার টানে লক্ষ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে রাণীশংকৈলের রামরায় দিঘিতে আসে অতিথি পাখিরা। এসব পাখি দেখতে আসা দর্শনার্থীদের অনেকে বলছেন, দিঘির স্বচ্ছ পানিতে ঝাকে ঝাকে অতিথি পাখিদের ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য সত্যিই মনমুগ্ধকর।

এখন শীতকাল হওয়ায় উত্তর মেরু থেকে হিমালয় পেরিয়ে অতিথি পাখি আসা শুরু হয়েছে। পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতে যেমন- ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যামশায়ার, সাইবেরিয়া, আসাম, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, এন্টার্কটিকা, চীনের লাদাখ অঞ্চলে শীত যখন মাইনাস শূন্য ডিগ্রিতে নেমে আসে, যখন গাছের পাতা ঝরে যায় প্রচন্ড শীতে, এবং কি খাবারের প্রচণ্ড অভাব দেখা দেয়, ঠান্ডার প্রকোপে পাখির দেহ হতে পালক খসে পড়ে, প্রচণ্ড তুষারপাতে সাদা হয় যখন সমস্ত সবুজ বনানী, প্রকৃতির নানান বিরূপ আচরণে তখন সে দেশের পাখিগুলো যেসব দেশে অপেক্ষাকৃত কম শীত এবং খাদ্য ও নিরাপত্তার অভাবে সেসব দেশ ছেড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি হয়ে আসে। শীতের প্রোকোপ কম হওয়ার দেশ হিসেবে এসব পাখি বাংলাদেশকে বেছে নেয়। বাংলাদেশে অতিথি পাখি আসার সময় হচ্ছে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর সময় অবধি। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারি এই দুই মাসে সবচেয়ে বেশি পাখি আসে বাংলাদেশে

নূরুল আলম নামে এক দর্শনার্থী জানান, ‘রামরায় দিঘিটি এখন নতুন ভাবে

সাজানো হয়েছে। আগের থেকে এখানকার পরিবেশ অনেক  সুন্দর হয়েছে। রামরায় দীঘিতে অতিথি পাখি এসেছে শুনে দেখতে এসেছি। বেশ ভালো লাগলো।’

আনোয়ারুল ইসলাম নামে পঞ্চগড় থেকে আসা  এক ব্যক্তি জানান ‘অতিথি পাখি

দেখতেই মূলত: এখানে এসেছি। ভালোই লাগছে। এরপর আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেখতে আসবো ভাবছি।’

এ দেশের নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়ে শীতে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে রামরাই দীঘিতে আসে পাখিগুলো। উপজেলা শহর থেকে ৪ কিমি দূরে হোসেনগাঁও ইউনিয়নের উত্তরগাঁও গ্রামের কাছেই বরেন্দ্র অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয় রামরাই দীঘির অবস্থান।

 সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, ‘এই ঐতিহ্যবাহী পুকুরের পাশেই আমার ইউনিয়ন পরিষদ। এসব অতিথি পাখিদের যেন কেউ কোন ক্ষতি না করতে পারে এ দিকে আমার যথেষ্ট্য নজর রয়েছে। বর্তমানে এসব অতিথি পাখি দেখতে প্রতিদিনপ্রচুর দর্শনার্থী ছুটে আসছে। এ দিঘিটির চার পাশ জুড়ে আরোও উন্নত মানের নৈসর্গীক দর্শনীয় কাজ করতে পারলেই দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছি।  ‘

রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন , ‘জেলার সর্ববৃহৎ এ দীঘিতে দুর থেকে ছুটে আসা  অতিথি পাখিদের সুন্দর একটি অভয়ারণ্য পরিণত হয় শীতকালে। এসব পাখিদের কোন সমস্যা যেন না হয় আমরা সেদিকে খেয়াল রাখছি। কেউ যেন পাখি শিকার না করতে পারে সে বিষয়ে আমরা সর্বদা নজরদারি করছি।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *